
ইন্দোনেশিয়ায় ১৮ আগস্ট শুরু হতে যাওয়া এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের প্রত্যাশার তালিকায় রয়েছে আর্চারি। ১৪টি ডিসিপ্লিনে বাংলাদেশ অংশ নিলেও বাংলাদেশ অলেম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ) পদকের নিশ্চিত প্রত্যাশা করছে না কোনোটিতেই। তবে ভালো ফলের প্রত্যাশায় কাবাডি ও শ্যুটিংয়ের সঙ্গে যোগ করেছে আর্চারি। এই মুহূর্তে দেশের সেরা আর্চার রোমান সানা। গেমসে অংশ নিতে যাওয়ার আগে তিনি মুখোমুখি হয়েছিলেন পরিবর্তন ডটকমের। এই রিকার্ভ আর্চার জানালেন নিজের ও দলের প্রত্যাশা নিয়ে।
প্রশ্ন: দ্বিতীয়বারের মতো এশিয়ান গেমসে অংশ নিতে যাচ্ছেন আপনি। এই মুহূর্তে দেশের সেরা আর্চার বলে আপনার কাছে বড় কিছুই চায় সবাই। এই আসরে নিজেকে নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী?
রোমান: গত এশিয়ান গেমসে যে রেজাল্ট করেছিলাম তার চেয়ে ভালো ফল করতে চাই, এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য। আর ব্যক্তিগতভাবে যদি বলেন, তাহলে আমি বলব- আমার লক্ষ্য কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়া। কারণ, কোয়ার্টার ফাইনালে যেতে পারলে এরপরের ধাপই সেমি ফাইনাল এবং ফাইনাল। কোয়ার্টারে যেতে পারলে তাই ওই ধাপে যাওয়াটা সহজ হয়ে যাবে। তাই মূল টার্গেট কোয়ার্টারে যাওয়া। কঠোর প্ররিশ্রম করেছি, কিছুদিন আগে সুইজারল্যান্ড থেকেও ট্রেনিং করে আসলাম। আমরা বিশ্বকাপও খেলে এসেছি গেল মাসে। আশা করি, এবার রিকার্ভ ও কম্পাউন্ড দুই বিভাগ মিলেই আমরা ভালো ফলাফল উপহার দিতে পারব বাংলাদেশকে।
প্রশ্ন: ব্যক্তিগত ইভেন্ট নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী?
রোমান: আমার ব্যক্তিগত লক্ষ্য কোয়ার্টার ফাইনাল। এছাড়া টিম আছে, মিশ্র ইভেন্ট দল আছে। আমাদের টিমটা শক্তিশালী। যেভাবে প্র্যাকটিস করছি, তাতে ওই জায়গার আবহাওয়া যদি ভালো থাকে তবে ভালো কিছুই হবে। বিদেশে আমাদের বড় সমস্য হয় বাতাসে। যেমন- ক’দিন আগেই বিশ্বকাপ খেলে আসলাম জার্মানি থেকে। সেখানে মাঠটা ছিল প্রায় এক হাজার মিটার। বিশাল বড় মাঠ। কিন্তু মাঠে বাতাস আমাদের ভুগিয়েছে খুব।
প্রশ্ন: বিশ্বকাপ খেলে আসাটাও নিশ্চই আপনাদের আত্মবিশ্বাসী রাখবে এই আসরে…
রোমান: তা তো অবশ্যই। জার্মানিতে বিশ্বকাপে আমি শেষ ষোলোতে গিয়েছিলাম। তবে আমাদের কম্পাউন্ড টিম কোয়ার্টার ফাইনালে গিয়েছিল। এটা একটা ইতিহাস বলতে পারেন। প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েই কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছি। আমরা প্রমাণ কারতে পারছি যে আমরা উন্নতি করছি। ফেডারেশন কর্মকর্তারাও আমাদের নিয়ে অনেক চিন্তা-ভাবনা করছে। এই যে খেলাগুলো আমরা খেলছি, আমরা প্রতি বছর যদি এরকম চার-পাঁচটা টুর্নামেন্ট খেলতে পারি, তবে অবশ্যই আমাদের পারফরম্যান্স ভালো হবে, সাফল্য আসবে। আগে আমরা বছরে এক-দুইটা টুর্নামেন্ট খেলতাম। বড় আসরে বেশি যেতে পারতাম না। এখন আমরা বেশি বেশি খেলায় অংশ নেয়া শুরু করেছি। পরবর্তী বছরে আমাদের বিশ্বকাপ আছে দুটি, এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ আছে, ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ আছে। মিনিমাম হলেও ছয়টার মতো বড় খেলা আছে। যদি অংশ নিতে পারি, ছয়টার ভিতরে দেখবেন একটাতে আপনা-আপনিই আমদের মেডেল চলে আসবে। আসলে আমরা যতো টুর্নামেন্টে অংশ নিতে পারবো ততো অভিজ্ঞতা বাড়বে।
প্রশ্ন: এমনিতে কোয়ার্টার আপনাদের প্রধান লক্ষ্য। সেটা পূরণ হলে পদকের লড়াইয়ে যাওয়ার বিশ্বাস রাখেন?
রোমান: আমাদের চেষ্টা থাকবে সর্বোচ্চটা দেয়ার। আমাদের একটা আফসোস যে কমনওয়েলথ গেমস, ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে আর্চারি ছিল না। যদি থাকতো অনেক ভালো রেজাল্ট হতো। এই আসরে আমাদের একশতে ৯০ ভাগ সুযোগ থাকে ভালো করার। কারণ ওখানে দেশের সংখ্যা কম থাকে। আর এখানে (এশিয়ান গেমস) কোরিয়া, জাপান, চীন, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশ খেলবে। এরা অলিম্পিকের মতো আসরে চ্যাম্পিয়ন। এদের কাছ থেকে রেজাল্ট নিয়ে আসাটা স্বপ্নের বিষয়। তবে আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা দেব। গত আসরে আমি ১৭তম র্যাঙ্কিং হয়েছিলাম। দুইটা ম্যাচ জিতেছিলাম। টিমে আমরা নবম হয়েছিলাম। এবার অবশ্যই তার চেয়ে অনেক ভালো রেজাল্ট হবে।
প্রশ্ন: জার্মান কোচ মার্টিন ফ্রেডরিখ যোগ দেয়ার পর তো বেশ কিছুদিন তার সঙ্গে অনুশীলন করলেন। তার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
রোমান: সে অনেক ভালো কোচ। মজাও করেন আমাদের সঙ্গে। ওনার একটা জিনিস ভালো লাগে যে উনি ডিসিপ্লিনের ব্যপারে খুব কড়া। উনি আমাদের যেভাবে প্র্যাকটিস করান তা অন্য যে কোনো কোচদের চেয়ে তা আলাদা। খেলোয়াড়দের সঙ্গে বন্ধুর মতো। উনি ২০২০ সাল পর্যন্ত আছেন। আশা রাখি, ২০২০ সাল পর্যন্ত থাকলে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যাবে।
প্রশ্ন: সুইজারল্যান্ডে আপনার সময়টা কেমন কেটেছে?
রোমান: অনেক ভালো কেটেছে। এশিয়ান গেমস মিশন শেষ করে দেশে ফিরে আবার সুইজারল্যান্ড যাব। ওখানে অলিম্পিক পর্যন্ত আমার ট্রেনিং চলবে। মাঝে দেশের হয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গেমস বা জাতীয় গেমসে অংশ নেব। ওই জায়গায় আমার লক্ষ্য সরাসরি অলিম্পিকে খেলার যোগ্যতা অর্জন করা। যে তিন-চারটা গেম আছে; সেখানে অংশ নিতে পারলে আশা করি আমি সেটা পারব।