বাদ পড়াটা এখন অতীত : মোসাদ্দেক

1679
Advertisement

 

বড় দৈর্ঘ্যের ম্যাচে দুর্দান্ত পারফর্ম করে নির্বাচকদের নজরে এসেছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। তবে জাতীয় দলে অভিষেক হয় টি-টুয়েন্টি দিয়ে। ধীরে ধীরে নিজেকে মেলে ধরে বাকি দুই সংস্করণেও জায়গা করে নেন। তবে সেই টি-টুয়েন্টি স্কোয়াডেই অনিয়মিত হয়ে পড়েন। গত এক বছর ছিলেন দলের বাইরে। অবশ্য পারফরম্যান্সের কারণে নয়, ইনজুরির জন্য। আর ইনজুরি থেকে ফিরে ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো খেলেছেন তাও নয়। এমনকি বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকেও বাদ পড়েছেন এবার। তারপরও সম্পূর্ণ ফিট হওয়ায় নির্বাচকরা আস্থা রেখেছেন তার উপর। আফগানিস্তানের বিপক্ষে জুনের তিন ম্যাচের টি-টুয়েন্টি সিরিজে দলে আছেন তিনি। রোববার ফের জাতীয় দলে ফেরার দিনে মোসাদ্দেক কথা বলছেন গণমাধ্যমের সঙ্গে। আলাপের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো পরিবর্তন ডট কমের পাঠকদের জন্য-

-ছোট একটা বিরতির পর আবার জাতীয় দলে ফিরলেন, কেমন লাগছে?

মোসাদ্দেক : বিরতিটা ছোট না আমার কাছে। অনেক বড়, প্রায় এক বছর পর আমি আবার রঙিন পোশাকে খেলব বাংলাদেশ দলের হয়ে। আমার কাছে এটা ভালো লাগারই বিষয়। নতুন সুযোগ আমার জন্য।

-ঘরোয়া ক্রিকেটে খুব একটা খুব ভালো হয়নি। তারপরও নির্বাচকরা আস্থা রেখেছেন। সব মিলিয়ে আফগানিস্তান সিরিজের প্রস্তুতিটা কেমন হচ্ছে?

মোসাদ্দেক : নিজের উপর বিশ্বাসটা আমারও আছে। একজন খেলোয়াড়ের ভালো সময়, খারাপ সময় যাবে এটাই স্বাভাবিক। আমার খারাপ সময় গেছে। সামনে কি হবে বলতে পারব না। তবে আমার চেষ্টা থাকবে সর্বোচ্চটা দেওয়ার।

-এই বিরতির পর আপনার আত্ম উপলব্ধি কেমন হলো?

মোসাদ্দেক : যদি আমি চিন্তা করি অনেক কিছুই করে ফেলব তাহলে এটার ফলাফল কিছুই আসবে না। আমি যদি চিন্তা করি আমি আমার জায়গাতে থাকব, আমার যতটুকু সামর্থ্য আছে হয়ত এখান থেকে অনেক ভালো কিছু করতে পারব।

-পেস বোলিংয়ের বিপক্ষে স্বচ্ছন্দ নন বলে কথা আছে, এটা নিয়ে কি কোন কাজ করছেন?

মোসাদ্দেক : আমি আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে হয়ত ২৫-২৬টা ম্যাচ খেলেছি। এর মধ্যে তিন থেকে চারটা হয়ত দেশের মাটিতে খেলেছি। বাকি সব ম্যাচ দেশের বাইরে। তো আমার যে সফলতাগুলো আছে সব দেশের বাইরে। দেশের বাইরে যাদের বিপক্ষে খেলেছি ওখানে স্পিন বলতে নেই আসলে। সব পেস কন্ডিশন। এখন আপনারাই ভালো বলতে পারবেন কি পরিস্থিতি ছিল বা কি কন্ডিশন ছিল। এটা বলার আর অপেক্ষা রাখে না যে আমি পেস বলে ভালো না স্পিন বলে ভালো সেটা হয়ত সময়ই বলে দেবে।

-এক বছর দলের বাইরে। এর মধ্যে ঘরোয়া ক্রিকেটেও ভালো হয়নি। তাই কতটা আশা করেছিলেন দলে থাকার ব্যাপারে?

মোসাদ্দেক : আমি জাতীয় দলে যতটুকু খেলেছি, আমার নিজের যতটা আত্মবিশ্বাস আছে। এবং যেমন সুনামের খেলোয়াড় আমি। সব ঠিক থাকলে এবং পারফরম্যান্স থাকে তাহলে বাদ পড়ার কথা না। ওই একট বিরতি, একটা অতীত আমার জন্য। ওটা নিয়ে চিন্তা করছি না। সামনে যা তা নিয়েই ভাবছি।

-চলতি বছরের প্রিমিয়ার লিগে সাত আট নম্বরে ব্যাট করেছেন। বেশ কিছু ম্যাচ ফিনিশিং দিয়ে এসেছেন। এটা জাতীয় দলে ফেরার ব্যাপারে কাজে লাগলো কি?

মোসাদ্দেক : প্রিমিয়ার লিগের শেষ ১০ ম্যাচের মধ্যে হয়ত আটটাতেই আমি অপরাজিত ছিলাম। এটা আমার জন্যে অনেক প্লাস পয়েন্ট যে অপরাজিত ছিলাম। কত রান করেছি সেটা মুখ্য না। ওটা নিয়েই ফোকাস করছি।

-আফগান সিরিজে ব্যক্তি মোসাদ্দেকের ভূমিকা নিয়ে কতটা প্রস্তুত?

মোসাদ্দেক : যে কোনো ম্যাচে আমি যখন বোলিং করি আমি তখন ভাবি যে আমি বোলার হিসেবে খেলছি। বল হাতে পেলে চিন্তা করি কিভাবে ডট বল করা যায়। ব্যাটসম্যানকে পড়ে বল করার চেষ্টা করি।

-আইপিএলে ভারতের তরুণ ক্রিকেটাররা দারুণ খেলছেন। তাদের এক্সক্লুসিভ ব্যাটিং দেখে কিছু মাথায় আসে কি না…

মোসাদ্দেক : আইপিএল দেখে আসলে আমরা যাদের সঙ্গে খেলতে যাব তাদের বিচার করতে পারবেন না। আইপিএলে তাদের (আফগান) ব্যাটসম্যানরা কেউ খেলছে না, বোলাররা খেলছে। আমরা ব্যাটসম্যানদেরকে চিন্তা করি যে ওরা এবিডি ভিলিয়ার্সের মতো মারবে বা বিরাট কোহলির মতো মারবে তাহলে ভুল চিন্তা হবে। ওদের সঙ্গে আমরা অনেক ম্যাচ খেলেছি, ওদের দুর্বলতা জানি। ওদের শক্তি আর দুর্বল জায়গা খুঁজে বল করা আমাদের কাজ হবে।

-আফগানিস্তানের কয়েকজন মানসম্পন্ন স্পিনার আছেন, যারা বর্তমানে দারুণ ছন্দেও আছেন। তাদের স্পিন সামলানোর পরিকল্পনা কি?

মোসাদ্দেক : ওদের দুইজন স্পিনার আছে, খুব ভালো। তারা খুব সফল বোলার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। এটা নিয়ে বলতে গেলে অনেক কিছুই বলা যায়। আমরা যদি চিন্তা করি যে অনেক রান করে ফেলব, অনেক কিছু করে ফেলব, অনেক অ্যাটাকে যাব সেটাও ভুল হবে। আবার অতিরিক্ত রক্ষণে যাওয়াও ভুল হবে। তারা আইপিলে খুব ভাল বল করছে। আইপিএলে যাদের বিপক্ষে বল করছে তারা হয়ত তাদের জায়গাতে সফল হচ্ছে। এমন হতে পারে আমাদের সাথে তারা ভালো জায়গায় বল নাও করতে পারে। বা তারা যে বল করবে আমরা যেন ভালো ম্যানেজ করতে পারি। ওদের নিয়ে চিন্তা না করে নিজেদের উপর ফোকাস করা উচিত, নিজেদের সামর্থ্যে বিশ্বাস রাখা উচিত।

-টি-টুয়েন্টি র‍্যাঙ্কিংয়ে ওরা এগিয়ে, তাহলে ওরা কি আপনাদের বিপক্ষে বড় দল হিসেবে খেলবে?

মোসাদ্দেক : টি-টুয়েন্টিতে বলা যায় না কে বড় দল। কোন দিন কার ব্যাটে বল লাগবে, কে সফল হবে বলা যায় না। এখানে বলতে পারবে না কে বড় দল। দিনশেষে ফল হওয়ার পর বোঝা যাবে কে ভালো খেলল। ভালো ক্রিকেট খেলাটা গুরুত্বপূর্ণ।

-আপনাকে দেখে বেশ আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছে। দলের অনেকের কথায় আত্মবিশ্বাস আছে, মাঠেও কি থাকবে?

মোসাদ্দেক : কথা দিয়ে যদি ক্রিকেট খেলা যেত তাহলে তো ভালোই হত। কথা দিয়ে ক্রিকেট হয় না। ক্রিকেটটা মাঠেই খেলতে হয়।